জয়দেবপুর থানার সাবেক ওসি সৈয়দ মিজানুর ইসলামের ইসলাম
গাজীপুর প্রতিবেদক
দুই মাস আগের তারিখে বিয়ে রেজিস্টেশন করতে কাজীকে চাপ
সঙ্গে ছিলেন প্রথম স্ত্রীও
তালাক দিতে ক্রমাগত হুমকি ছাত্রীর পরিবারকে
প্রয়োজনে আদালতে যাওয়া ঘোষণা ভুক্তভোগীর
রিসোর্ট থেকে কলেজছাত্রীসহ উদ্ধার, ১০ লাখ টাকা দেনমোহরে ছাত্রীকে দ্বিতীয় বিয়ে এবং বিয়ের পর দিন থেকে তালাকের জন্য নববধুকে ভয়ভীতি দেখানোসহ একের পর এক নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডে গাজীপুরে এখন আলোচিত নাম জয়দেবপুর থানার সাবেক ওসি সৈয়দ মিজানুর ইসলামের ইসলাম। আলোচিত এ ঘটনায় গত ১৯ জানুয়ারি তাকে থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়।
তারপরও থেমে নেই তার বিতর্কিত কাজ। গত ৩১ জানুয়ারি ভাড়া করা এক তরুণীকে নকল ‘ওই ছাত্রী’ সাজিয়ে মানিকগঞ্জের একটি কাজী অফিসে গিয়ে দুই মাস আগের তারিখে বিয়ে করতে গিয়ে ধরা খেয়ে পালিয়ে রক্ষা পেয়েছেন বিতর্কিত সেই ওসি। তার এসব কর্মকান্ডে বিব্রত গাজীপুর ও মানিকগঞ্জ জেলা পুলিশও।
ছাত্রীর পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ৩১ জানুয়ারি মানিকগঞ্জ পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের নিকাহ রেজিষ্টার (কাজী) মো. মোশারফ হোসেনের অফিসে যান মানিকগঞ্জ শহরের বাসিন্দা এ্যাডভেকেট মো. মিজানুর রহমান। একটি বিয়ে রেজিষ্টেশনের কথা বলে তিনি কাজীকে তার মনিকগঞ্জ শহরের চেম্বারে ডেকে নেন এ্যাডভেকেট মিজান।
কাজী সাখাওয়াত হোসেন ওই অফিসে গেলে সেখানে ওসি সৈয়দ মিজানুর ইসলামের প্রথম স্ত্রী ছাড়াও আরো কয়েকজনকে দেখতে পান। বিয়ের উকিল এবং পাত্র-পাত্রীর নাম ঠিকানা জানতে চাইলে এ্যাডভেকেট মিজান নিজেই বিয়ের উকিল হবেন জানিয়ে ওসিকে পাত্র এবং পাত্রীর নামের স্থানে ওসি মিজান দ্বিতীয় স্ত্রীর অর্থাৎ কলেজ ছাত্রীর নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বার, জন্ম তারিখ এবং পিতা-মাতার নাম ঠিকানা লিখেন। বিষয়টি কাজীর সন্দেহ হয়। তিনি পাত্রীর হিজাব ও মুখের মাস্ক খুলতে বললে ধরা পড়েন কলেজ ছাত্রী পরিচয়ে আসা ‘নকল স্ত্রী’। বিষয়টি কাজী মোশারফ হোসেন ওসির আসল দ্বিতীয় স্ত্রী কলেজ ছাত্রী এবং তার পরিবারকে জানান। ওই ফাঁকে ওসিসহ সবাই পালিয়ে যান। পরে কলেজ ছাত্রী ঘটনাটি মানিকগঞ্জ সদর থানার ওসি জানান।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নিকাহ রেজিষ্টার (কাজী) মোশারফ হোসেন বলেন, ওসি মিজানুর জঘন্য খারাপ একজন লোক। তিনি দুই মাস আগের তারিখে বিয়ের রেজিষ্ট্রেশন করতে তাকে নানা ভাবে হুমকি ও ভয় দেখিয়েছেন। পাত্রীর নাম-ঠিকানা জানার পর তার সন্দেহ হয়। কারণ প্রকৃত প্রাত্রী ও তার পরিবারের সবাইকে আগে থেকেই তিনি চিনতেন।
ওসি সৈয়দ মিজানুর ইসলামের ঘনিষ্টরা জানান, রিসোর্ট থেকে উদ্ধার ঘটনায় ধর্ষণ মামলা থেকে রক্ষা পেতে উর্ধতন পুলিশ কর্মকতাদের জিজ্ঞাসাবাদে ওসি মিজানুল জানিয়ে ছিলেন ওই ছাত্রীকে তিনি দুই মাস আগে দুই লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে করেছেন। পুলিশ সুপার কাবিননামা চাইলে দেখাতে পারেননি ওসি। পরে রিসোর্ট থেকে উদ্ধারের পরদিন রাতে পুলিশ কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্তেÍ ছাত্রীকে গাজীপুরের জয়দেবপুর কাজী অফিসে ১০ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে করেন ওসি সৈয়দ মিজানুল। বিয়ে করে ধর্ষণ মামলা এবং জেল-হাজতে যাওয়া থেকে রক্ষা পেলেও রিসোর্টকান্ডের ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল আলম। তদন্ত কমিটি ওসির কাছে দুই মাস আগের বিয়ের কাবিননামা জমা দিতে বলেন। এ কারনেই পিছনের তারিখ দিয়ে কাবিননামা করতে ভাড়া করা এক তরুণীকে ‘নকল ছাত্রী’ বানিয়ে কাজীর কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন ওসি মিজানুল।
জানতে চাইলে ওসি সৈয়দ মিজানুরের দ্বিতীয় স্ত্রী কলেজ ছাত্রী বলেন, বিয়ের পর দিন ওসি তাকে মানিকগঞ্জ পাঠিয়ে দিয়েছেন। বিয়ের তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও একদিনের জন্য তার সাথে কোন যোগাযোগ করেননি। তিনি ফোন দিয়ে নাম্বার বন্ধ পান। গত রবিবার স্বামীর খোঁজে গাজীপুরে গিয়ে জানতে পারেন বাসা ছেড়ে দিয়েছেন মিজানুর। কোথায় আছেন কেউ বলতে পারেন না। বাধ্য হয়ে ফিরে আসেন। এদিকে ওসি ও তার ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে ডিভোর্স দিতে এবং অভিযোগ তুলে নিতে তার (ছাত্রীর) পরিবারকে ক্রমাগত চাপ দিচ্ছেন। বিষয়টি তিনি তদন্ত কমিটির প্রধান গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সানোয়ার হোসেনকে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন।
ওই ছাত্রী আরো বলেন, ওসির কারণে তার স্বাভাবিক জীবন, লেখাপড়া সব শেষ হয়ে গেছে। তিনি স্ত্রীর মর্যাদা না পাওয়া পর্যন্ত লড়াই করবেন। প্রয়োজনে আদালতে যাবেন।
এসব বিষয়ে জানতে ওসি সৈয়দ মিজানুর ইসলামের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।