চেয়ারম্যান পলাশের দুর্নীতির অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক
গাজীপুর প্রতিবেদক
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন পলাশের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, সরকারি অর্থ আত্মসাত ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে তার দুর্নীতির বিষয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর পর অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকের গাজীপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. সাইদুজ্জামানকে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়।
অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের জন্য সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র চেয়ে গত ৩ মার্চ অনুসন্ধান কর্মকর্তা কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মো. বেলাল হোসেন সরকারকে চিঠি দিয়েছেন।
চিঠি প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা প্রকৌশলী মো. বেলাল হোসেন সরকার।
যেসব প্রকল্পের রেকর্ডপত্র চেয়েছে দুদক:
অনুসন্ধান তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ‘শহীদ ময়েজ উদ্দিন মুক্তমঞ্চ নির্মাণ ও সুপেয় পানির পাম্প’ স্থাপন প্রকল্প। এ প্রকল্পের টেন্ডারের যাবতীয় নথিপত্র সংক্রান্ত যাবতীয় রেকর্ডপত্র চাওয়া হয়েছে।
দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০২০-২০২১, ২০২১-২০২২ ও ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে কালীগঞ্জ উপজেলায় মশা নিধনের জন্য মোট কত টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে (বছর ভিত্তিক) এ সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি এবং বরাদ্দকৃত টাকা মশা নিধনের জন্য ব্যবহারের নিমিত্তে ঠিকাদার নিয়োগ সংক্রান্ত টেন্ডারের নথিপত্র সংক্রান্ত যাবতীয় রেকর্ডপত্রও চাওয়া হয়েছে।
এর পর রয়েছে ২০১৯ সাল থেকে কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ ভবন ও সীমানা প্রাচীর সংস্কার সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের দরপত্র বিজ্ঞপ্তি, ঠিকাদারের দাখিলকৃত দরপ্রস্তাব, টেন্ডার ওপেনিং ও মূল্যায়ন কমিটি, দরপত্র মূল্যায়ন প্রতিবেদন, তুলনামূলক বিবরণী, নোটিফিকেশন অব এওয়ার্ড, চুক্তিপত্র, কার্যাদেশ ও বিল প্রদান সংক্রান্ত সকল নথিপত্র দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
উপজেলা প্রকৌশলীর দপ্তর ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৬০ লাখ টাকার বেশী ব্যয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা কমপ্লেক্সের ভেতর শহীদ ময়েজ উদ্দিন মুক্তমঞ্চ এবং সুপেয় পানির পাম্প স্থাপন প্রকল্পের জন্য ২০১৫ সালের শুরুতে দরপ্রত্র আহবান করা হয়।
নির্মান শেষে একই বছরের ৯ অক্টোবর শহীদ ময়েজ উদ্দিন মুক্তমঞ্চের উদ্বোধন করা হয়। এরপর মাত্র ৮ বছরের মাথায় ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে উপজেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির সভায় ‘জরাকীর্ণ’ দেখিয়ে মুক্তমঞ্চটি ভেঙ্গে ফেরার সিদ্ধান্ত হয় এবং স্থানে ৮তলা একক উপজেলা পরিষদ ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। এরপর ৭ নভেম্বর মুক্তমঞ্চটি ভেঙ্গে ফেলা হয়।
জানা গেছে, মশা নিধনে উপজেলা পরিষদ থেকে ২০-২১ অর্থ বছরে ৪০ লাখ টাকা, ২১-২২ অর্থ বছরে ৫০ লাখ টাকা এবং ২২-২৩ অর্থ বছরে ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। তিন অর্থ বছরে মোট বরাদ্দের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এছাড়াও সর্বশেষ ২৩-২৪ অর্থ বছরে মশা নিধনে আরো ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।
কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মো. বেলাল হোসেন সরকার বলেন, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে দুদকের চাহিদা অনুযায়ী তথ্য দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
২০১৪ সালের ৩১ মে অনুষ্ঠিত চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় সমর্থন পেয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন মোয়াজ্জেম হোসেন পলাশ। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ২৪ মার্চ অনুষ্ঠিত পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দ্বিতীয় দফায় দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।