ছবি: নিহত দুই ভাই কাকন ও সাগর
গাজীপুর প্রতিবেদক
সৌদি আরবে খুন হয়েছেন গাজীপুরের সহোদর দুই ভাই। সৌদি পুলিশ দাম্মাম শহরের একটি ফ্ল্যাট থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করে। বুধবার মধ্য রাতে তাদের মৃত্যুর খবর আসে গাজীপুর মহানগরীর উত্তর ভুরুলিয়ার লম্বরি বাড়িতে।
খুন হওয়া কামরুজ্জামান কাকন (২৬) ও কামরুল ইসলাম সাগর (২২) গাজীপুর মহানগরীর উত্তর ভুরুলিয়ার আদর্শপাড়ার ব্যবসায়ী মো. মোশারফ হোসেন লম্বরির ছেলে।
জানা গেছে, কাকন একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে চাকরির খোঁজ করছিলেন। ঢাকার নয়াপল্টনের সামিয়া ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক বাহার উদ্দিন ২১ লাখ টাকা চুক্তিতে জব ভিসায় কামরুজ্জামান কাকনকে কানাডায় পাঠানোর প্রস্তাব দেন বাবা মোশারফ হোসেন লম্বরির কাছে। ৩ লাখ টাকা নিয়ে দীর্ঘদিন চেষ্টা করেও তিনি কাকনকে কানাডা পাঠাতে পারেননি বাহার উদ্দিন । পরে বাহার উদ্দিন ভালো বেতনে ছোট ছেলে সাগরকে ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকায় সৌদি পাঠানোর প্রস্তাব দেন। রাজি হলে গত বছরের অক্টোবর মাসে সৌদি যায় সাগর। কিন্তু কাজের পরিবর্তে তাকে দাম্মামে একটি ঘরে আটকে রেখে আরো ৪ লাখ টাকা দাবি করায় হয় বাবা মোশরফ হোসেনের কাছে। ছেলের কথা ভেবে আরো ৪ লাখ টাকা দিতে বাধ্য হন। টাকা নিয়েও ছেলেকে ভালো চাকরি না দিয়ে খাবার ডেলিভারীর কাজ দেয়। কানাডা পাঠানো জন্য নেয়া ৩ লাখ টাকা ফেরত চাইলে বড় ছেলে কাকনসহ দুই ছেলেকে সৌদির মদিনা ইউনিভার্সিটিতে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রস্তাব দেন বাহার উদ্দিন। নতুন করে ৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা নিয়ে গত বছরের ৪ ডিসেম্বর কাকনকে সৌদি নিয়ে যান বাহার। সেখানে কাজ না দিয়ে দুই ভাইকে একটি ঘরে আটকে রাখেন। বিষয়টি জানার পর বাহার উদ্দিন কাকান ও সাগরের বাবা মোশারফ হোসেনকে উমরা ভিসায় সৌদি গিয়ে ছেলেদের দেখে আসার প্রস্তাব দেন। গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি বাহার উদ্দিনের সাথে সৌদি আরব যান মোফারফ হোসেন। এ সময় দুই ছেলেই জানান, তাদের খাবার ডেলিভারীর কাজ দেওয়া হয়েছে। ঠিকমত খেতে দেওয়া হয় না। রাখা হয় ছোট্ট ঘরে। ২২ ডিসেম্বর তিনি দেশে ফিরেন। ছেলেদের কাগজপত্র ঠিক করার কথা বলে থেকে যান বাহার। আসার সময় বাহার একটি পলিথিন মোড়ানো একটি ব্যাগ দিয়ে ঢাকার ঠিকানায় পৌছে দিতে বলেন মোশারফ হোসেনকে। ব্যাগে কি ছিল তিনি দেখেননি। সৌদি বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশ তল্লাশী করে ব্যাগ থেকে একটি পুটলি উদ্ধার করে। পরে পুটলি রেখে তাকে ছেড়ে দেয়। তিনি ফিরে আসার পরদিন বাহার উদ্দিন বাংলাদেশে চলে আসেন। এসেই ব্যাগে থাকা পুটিলি ফেরত চান। ইমিগ্রেশন পুলিশ রেখে দিয়েছে জানালে পুটিলিতে ১৩ লাখ টাকার সোনা ছিল দাবি করে টাকার জন্য চাপ দেন। কয়েক দফা হুমকি দেন। বলেন টাকা না দিলে সৌদিতে থাকা ছেলেদের ক্ষতি হবে। এসব ঘটনায় তিনি নগরীর সদর থানায় একটি সাধারন ডায়রি করেন। সর্বশেষ ৯ মে একটি মাইক্রোবাসে করে ঢাকা থেকে একদল গুন্ডা নিয়ে এসে অস্ত্র উচিয়ে মোশরারফকে খুঁজতে থাকে। না পেয়ে মোশরফরের বৃদ্ধ বাবা আবুল কাশেম লম্বরিকে তুলি নিয়ে যেতে থাকে এবং দুই ছেলেকে হত্যার হুমকি দেয়। ঘটনার সময় মোশরফ বাড়িতে ছিলেন না। ৯৯৯ ফোন দিলে পুলিশ আবুল কাশেমকে উদ্ধার করে।
মোশারফ হোসেন বলেন, দুই ছেলে ছাড়া তার আর কোন সন্তান নেই। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই তাদের কানাডায় পাঠাতে চেয়ে ছিলেন। কানাডা পাঠানোর স্বপ্নই কাল হয়ে তার পরিবারের। বুধবার রাত ১২টার পর এক বাংলাদেশী ফোন করে দুই ছেলের হত্যাকান্ডের খবর দিয়েছে। পরে সৌদি দূতাবাসের মধ্যে জানতে পেরেছেন মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে ফ্ল্যটে প্রবেশ করে দুই ভাই। দুপুরের পর দরজার নীচ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়তে দেখে ফ্ল্যাট মালিক পুলিশে খবর দেয়। সিসি ফুটেজ দেখে মঞ্জু নামে বাংলাদেশী এক যুবকে পুলিশ সনাক্ত করেছে। তাকে দিয়েই বাহার তার দুই সন্তানকে ঘন করে থাকতে পারে ধারনা মোশারফ হোসেনের। তিনি দ্রুত সন্তানদের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের সাহায়তা কামনা করেন।