ঢাকা, মঙ্গলবার, ৪ঠা নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
ব্রেকিং নিউজ

সম্পদের পাহাড় সাবেক মেয়র মজিবুরের

 

জিসান মাহমুদ
ছিলেন সামান্য পোল্ট্রি খামারের মালিক। সংসারে ছিল নিত্য অভাব। ২০০৪ সালে নিযুক্ত হন গাজীপুরের কালিয়াকৈর পৌরসভার প্রশাসক। পরে মেয়র নির্বাচিত হন ২০১১ সালে। মেয়র হয়েই সম্পর্ক গড়েন ফ্যাসিষ্ট হাসিনা সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সাথে। এলাকায় পরিচিতি পান ‘মন্ত্রীপুত্র’ হিসেবে। ওই সুবাদে শুধু পৌরসভা নয়, বিএনপি মুজিবুর রহমানের প্রভাব-প্রতিপত্তি ছিল পুরো কালিয়াকৈর জুড়ে।
মন্ত্রীকে ব্যবহার করে টানা প্রায় দুই যুগ পৌর মেয়রের দায়িত্বে থেকে ‘শূন্য’ থেকে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। নির্মানাধীনসহ কালিয়াকৈরে তার বিলাশবহুল ৮টি বহুতল বাড়ির সন্ধান মিলেছে। রয়েছে বিঘায় বিঘায় জমি। সম্পদ গড়েছেন ঢাকা এবং দেশের বাইরেও। এসব সম্পদ গড়েছেন দুর্নীতির মাধ্যমে। দুর্নীতি দমন কমিশন তার দুর্নীতি এবং সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করেছে।

মজিবুর রহমান গাজীপুরের কালিয়াকৈর পৌরসভার পরীরেটেকী এলাকার মৃত শুক্কুর আলী এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘একটা চক্র তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।’

মজিবুরের যত সম্পদ:
এলাকায় গেলে লোকজন জানায়, কালিয়াকৈর পৌরশহরের বিভিন্ন এলাকায় দুর্নীতির জালে মোড়ানো মজিবুরের রয়েছে ৮টি বহুতল বাড়ি ও ভবন। এসব ভবনের মূল্য শত কোটি টাকার বেশী। পরীরেটেকীর ডুপ্লেক্স বাড়ীটিতে তিনি বাস করেন। প্রায় দেড় বিঘা আয়তনের নজরকাড়া ডিজাইন ও সম্পুর্ণ বিদেশী ফিটিংসে তৈরী বাড়িটির বাজার মূল্য ১২ কোটি টাকার বেশী। কারিয়াকৈরের সবচেয়ে অভিজাত ও শিল্প এলাকা সফিপুর বাজারে কৃষি ব্যাংকের পাশে রয়েছে তাঁর ৫ কাঠার জমির উপর আরেকটি একটি ৬তলা বাড়ি। চান্দরা হরিণহাটিতে রয়েছে দুইটি বাড়ি। একটি ৭তলা ও অপরটি ৫তলা। দুইটি বাড়িই বিশাল এবং আধুনি নির্মাণ শৈলীতে তৈরী। চান্দরা পল্লীবিদ্যুৎ লিবার্টি কারখানার সাথে তাঁর রয়েছে দৃষ্টিনন্দন ৫তলার আরো একটি বাড়ি। স্থানীয়দের ধারণ এই বাড়ির দাম ১০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। পৌরসভার লতিফপুর এলাকায় থানার পাশে তার রয়েছে ‘এস.টি. টাওয়ার’ নামে নির্মানাধীন ১১তলা একটি ভবন। বিশাল এই ভবনের নির্মাণ খরচ ইতিমধ্যে ২০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে অভিমত স্থানীয়দের। এছাড়াও কালিয়াকৈর বাজারে ৫তলা সোনালী ব্যাংক ভবন ও রাবেয়া সখিনা ক্লিনিক সংলগ্ন তার আরো একটি ৬তলা বাড়ি রয়েছে।

এছাড়াও রাজধানীর মহাখালী ডিওএইচএসে রয়েছে তার ৩২০০ বর্গফুটের একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট। ছেলে-মেয়ে পড়াশোনা করছে আমেরিকা ও কানাডায়। সেখানেও তার সম্পত্তি আছে বলে জানা গেছে। মজিবুর ও তার স্ত্রী আজমেরী বেগমের নামে রয়েছে বিঘায় বিঘা জমি। হাইটেক মডেল টাউন নামে একটি আবাসন প্রকল্পও গড়ে তুলেছেন তিনি। কালিয়াকৈর পৌরসভার বক্তারপুর এলাকায় সরকারি বনের জায়গার ভিতরে ২.৫০ একর (প্রায় ৮ বিঘা) জমি। একই এলাকায় কালামপুর মডেল পাবলিক স্কুল সংলগ্ন রেললাইনের পাশে রয়েছে ১.১০ একর (সোয়া ৩ বিঘা) এছাড়া পৌরসভার জমিদার বাড়ীর পাশে শ্রীফলতলী ইউনিয়ন পরিষদের পশ্চিম পাশে এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সঙ্গে শ্রীফলতলী মৌজায় মেয়রের আস্থাভাজন মো. আকরাম আলী তার স্বজনদের নামে কিনেছেন ১.৭৪ একর (সাড়ে ৫ বিঘা) জমি। পৌরসভার ছোট লতিফপুর সোহেল মিয়ার বিল্ডিংয়ের সঙ্গে রয়েছে ১.৫০ একর (সাড়ে ৪ বিঘা) জমি। একই এলাকায় লতিফপুর বাগানবাড়ীর সঙ্গে রয়েছে তার ১.৫০ একর, রাবেয়া সখিনা ক্লিনিকের পেছনে ৫৫ শতাংশ এবং কালিয়াকৈর পৌরসভার রেললাইনের সঙ্গে লাগোয়া ৩.৫০ একর (সাড়ে ১০ বিঘা) জমি রয়েছে মেয়র মজিবুর রহমানের। নিজের এবং স্ত্রী-সন্তান, শ্যালিকা ও কাছের বিশ^স্ত লোকজনের নামে এসব সম্পদ গড়েছেন সাবেক চতুর ওই মেয়র মজিবুর।

স্ত্রী-সন্তান ও কাছের লোকদের নামে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগে গত ৫ জানুয়ারি সাবেক মেয়র মজিবুর রহমানকে তলব করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালক আলমগীর হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিতে তাকে দুদক কার্যালয়ে তলব করা হয়। দুদকের দেওয়া চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, কালিয়াকৈর পৌরসভার সাবেক মেয়র মজিবুর রহমান বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। তার নিজের নামে, স্ত্রী সন্তান ও বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের নামে, বাড়ি, দোকানপাট, মার্কেট, জমি, প্লট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণের অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু গত ১০ মাসের তদন্তের তেমন অগ্রগতি দেখা যায়নি।

অভিযোগ রয়েছে, পৌরসভায় টেন্ডার বাণিজ্য, ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে টাকা লোপাট, পৌরসভায় জনবল নিয়োগে অনিয়ম, শিল্প কারখানার টেক্স ফাঁকি ইত্যাদি ছাড়াও সাধারণ মানুষের জায়গা জবর দখল, খাস ও বনের জমি জবর দখল করে বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে বিএনপি নেতা মেয়র মজিবুরের বিরুদ্ধে। আর সব কিছু করেছেন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের ছায়াতলে থেকে। মেয়রের চেয়ারে বসে গুছিয়েছেন নিজের আখের।

যেভাবে উত্থান:
মজিবুরের জন্ম দরিদ্র কৃষক পরিবারে। রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে পরিবহন ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন তিনি। পরে পোল্ট্রি খামার করেন, কিন্তু সফলতা পাননি। ২০০৪ সালে কালিয়াকৈর ইউনিয়ন পৌরসভার উন্নীত হলে বিএনপির তৎকালীন প্রভাবশালী নেতা চৌধুরী তানভীর আহমেদ সিদ্দিকীর হাত ধরে পৌর প্রশাসক নিযুক্ত হন। প্রশাসক হওয়ার পর ভাগ্য বদলে যায় মজিবুরের। শিল্প-কারখানা অধ্যুসিত পৌরসভার সব উন্নয়ন প্রকল্প, ঠিকাদারি ও আর্থিক কার্যক্রমে একক আধিপত্য বিস্তার করেন। ২০১১ ও ২০২২ সালের পৌর নির্বাচনে মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সহযোগিতায় নির্বাচিত হয়ে ফের বসেন মেয়রের আসনে। দীর্ঘ ২০ বছর মেয়রের চেয়ারে থেকে হয়ে উঠে প্রতাপশালী। গড়ে তুলেন শত শত কোটি টাকার সাম্রাজ্য।

স্থানীয়দের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ শাসনামলে শত শত বিএনপি নেতাকর্মীর নামে অসংখ্য মিথ্যা মামলা হলে তারা জল-জুলুমের শিকার হন। কিন্তু আওয়ামী লীগের সাথে সখ্যতার কারণে তার বিরুদ্ধে গত ১৬ বছরে কোন মামলা হয়নি। এখন তিনি নিজ দল বিএনপিতে গ্রæপিং সৃষ্টি করছেন। অনুসারীদের নিয়ে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ব্যরিষ্টার চৌধুরী ইশরাক আহমেদ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার ও কুৎসা ছড়াচ্ছেন। দুর্নীতিবাজ ওই সাবেক মেয়রের বিরুদ্ধে তদন্ত করে দ্রæত আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন বলে মনে করেন কালিয়াকৈর বিএনপির ত্যাগী নেতাকর্মীরা।

 

শেয়ার করুনঃ

বিজ্ঞাপন

সর্বশেষ

ফেসবুক পেজ

আর্কাইভ

SatSunMonTueWedThuFri
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930     
       
    123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
       
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       
      1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031     
   1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031 
       
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930    
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31      
   1234
567891011
12131415161718
19202122232425
2627282930  
       
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
       
       
    123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
       
      1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30      
   1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031 
       
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930     
       
    123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
       
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       
      1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031     
     12
10111213141516
17181920212223
242526272829 
       
  12345
13141516171819
20212223242526
       
      1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031     
    123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930 
       
   1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031 
       

স্বত্ব © ২০২৩ ঢাকা মেইল ২৪