# গঠিত হচ্ছে তদন্ত কমিটি
গাজীপুর প্রতিবেদক
গাজীপুরের শ্রীপুর সাব-রেজিষ্ট্রার মো. সোহেল রানার মাত্রাতিরিক্ত ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। আজ সোমবার তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে বলে রবিবার নিশ্চিত করেছেন গাজীপুর জেলা রেজিষ্ট্রার মো. মিজানুর রহমান।
সোহেল রানার মাত্রাতিরিক্ত ঘুষ-দুর্নীতি প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট পালন করছে দলিল লেখক ও স্ট্যাম্প ভেন্ডার সমিতি। দলিল রেজিষ্ট্রি না হওয়ায় প্রতিদিন কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। পাশাপাশি চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন জমি ক্রেতা-বিক্রেতারা।
দলিল লেখক মো. জাকারিয়া মোড়ল অভিযোগ করেন, গত ২ জুলাই একটি নামী প্রতিষ্ঠানের ৪১৫ কোটি টাকার একটি বন্ধকী দলিল রেজিষ্ট্রির জন্য গেলে সাব-রেজিষ্ট্রার তাঁর কাছে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। অথচ ওই দলিলে সরকারী ফি মাত্র ৪ লাখ টাকা। ওই টাকা ব্যাংক চালানের মাধ্যমে জমা দেন। কাগজপত্রে কোন ক্রুটি ছিল না। বাধ্য হয়ে বিষয়টি লিখিত ভাবে জেলা রেজিষ্ট্রারকে জানিয়েছেন। কিন্তু এখনো কোন প্রতিকার পাননি। দলিল রেজিষ্ট্রি না হওয়ায় আটকে গেছে ব্যাংক ঋণ।
দলিল লেখক মো. মোশারফ হোসেন জানান, ১৫দিন আগে ১০৫ শতাংশ জমি বন্টননামা দলিল রেজিষ্ট্রির জন্য ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা দাবি করেন সাব-রেজিষ্ট্রার। অথচ সরকারী ফি মাত্র মাত্র ৩-৪ হাজার টাকা। জমির মালিকদের একজন গুরুতর অসুস্থ ছিলেন। বাধ্য হয়ে ২ লাখ ৮০ টাকা ঘুষ দিয়ে রেজিষ্ট্রি করতে হয়েছে।
দলিল লেখক মো. ফারুক হোসেন বলেন, ৪০০ কোটি টাকার বন্ধকী দলিলের জন্য তার কাছে ২৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন সাব-রেজিষ্ট্রার সোহেল রানা। এত টাকা ঘুষ দিতে রাজি না হওয়ায় জমি রেজিষ্ট্র হয়নি। তিনি অভিযোগ করেন, ৫ শতাংশের একটি হেবা দলিলের জন্য ২০ হাজার টাকা ঘুষ নেন সাব-রেজিষ্ট্রার। দলিলে পেন্সিলে দাগ দিয়ে বিশেষ সংকেত একে টাকা দাবি করেন সাব-রেজিষ্ট্রার।
দলিল লেখক মো. আলাউদ্দিন ফরাজি বলেন, ১৯ বছরের পেশায় এরকম অসাধু কর্মকর্তা দেখিনি। বড় দলিল বিশেষ করে বন্ধকী এবং শিল্প-কারখানার জমি হলে আটকে রাখেন। নানা ছুতানাতায় লাখ লাখ টাকা ঘুষ নেন। দৈনিক হাজিরা ভিত্তিক দুই পিয়ন মো. জাহিদ ও মো. রায়হান তার হয়ে টাকা লেনদেন করেন। এজলাসে সাব-রেজিষ্ট্রার ছাড়া অন্য কেউ থাকার নিয়ম না থাকলেও তারা দুইজন এজলাসে সাব-রেজিষ্ট্রারের পাশে দাঁড়িয়ে থাকেন। সাব-রেজিষ্ট্রারের মাত্রাতিরিক্ত ঘুষের কারণে দলিল রেজিষ্ট্রি কমে গেছে। সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে।
দলিল লেখক মো. সুরুজ মিয়া বলেন, কেওয়া মৌজার ৭০ শতাংশ জমি বাবা তাঁর মেয়েকে হেবা দলিলে দান করতে চেয়েছিলেন। এজন্য ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন সাব-রেজিষ্টার। ২০ হাজার টাকা দিয়ে চেয়ে ছিলেন দলিলদাতা। কিন্তু সাব-রেজিষ্টার ঘুষের ৫০ হাজারের এক টাকা কমে দলিল করবেন না জানিয়ে দিলে আর দলিল করা হয়নি।
শ্রীপুর দলিল লেখক সমিতির সিনিয়র সদস্য মো. বেলাল হোসেন ও মো. এমদাদ মন্ডল অভিযোগ করেন, সাব-রেজিষ্ট্রার মো. সোহেল রানা গত ফেব্রæয়ারি মাসে যোগ দেন। এরপর তিনি ঘুষ দূর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। সব কাগজপত্র ঠিক থাকলেও চাহিদা মাফিক ঘুষ না দিলে দলিল করেন না। সরকারী ফি’র বাইরে প্রতি জমির মুল্যের উপর প্রতি লাখে ২ হাজার টাকা করে ঘুষ নেন ওই সাব-রেজিষ্ট্রার। হেবা দলিল, বন্টননামা দলিল ও পাওয়ারনামা দলিলের ফি নামেমাত্র হলেও মোটা অংকের টাকা নেন সাব-রেজিষ্ট্রার। তাঁঁর ঘুষ-দুর্নীতির কারণে ক্রেতা-বিক্রেতারা হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। এসব জানিয়ে জেলা রেজিষ্ট্রার ও নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শকের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। বাধ্য হয়ে তারা বুধবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ঘর্মঘট শুরু করেছেন। ধর্মঘট চলাকালে কোন দলিল রেজিষ্ট্রি করবেন না তারা। এর আগেই তাঁর অনিয়মের প্রতিবাদে গত দুই দফা ধর্মঘট করেন। ‘আর অনিয়ম করবেন না’ প্রতিজ্ঞা করলেও কিছুদিন পর ফের ঘুষ-দুর্নীতিতে জড়াচ্ছেন তিনি।
এ বিষয়ে সাব-রেজিষ্ট্রার মো. সোহেল রানা বলেন, দলিল লেখকদের একাংশ ধর্মঘট করছে। রবিবারও ৩০টির মতো দলিল রেজিষ্ট্রি হয়েছে। তবে তা স্বাভাবিকের তুলনায় কম। কতিপয় দলিল লেখক অনৈতিক সুবিধা দাবি করেছিল। দাবি মেনে না নেওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।




