বেনাপোল প্রতিনিধি
অবশেষে স্বজনদের কাছে ফিরতে পারলেন মানসিক ভারসাম্যহীন সেই ভারতীয় ব্যক্তি সুবাস নন্দী। দু’বছর আগে তিনি নিখোঁজ ভারতের উত্তর প্রদেশের বাহরাইচ জেলার রামনগর কান্ডা থেকে। দেড় বছর আগে উদ্ধার হন বাংলাদেশের নীলফামারি জেলার ডিমলা উপজেলা থেকে। তার সন্ধান পেয়ে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে মাঠে নামেন অ্যামেচার ভিডিও সোসাইটি বাংলাদেশ’র সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুল হুদা। তিনি এবং একাত্তর টিভির প্রচেষ্টায় অবশেষে মঙ্গলবার বেনাপোল বন্দর দিয়ে স্বজনদের হাতে তুলে দেয়া হলো তাকে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, দু’দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও দূতাবাসের কর্মকর্তার। মানসিক ভারসাম্যহীন ওই ব্যক্তিকে ফিরে পেয়ে আবেগাল্পুত হয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন স্বজনেরা।
জানা যায়, ‘রামনগর কান্ডা’ এই শব্দের সূত্র ধরেই প্রযুক্তির সাহায্যে কার্যত অসাধ্য সাধন করেন বাংলাদেশের চিত্র সাংবাদিক শামসুল হুদা। তাঁর তৎপরতাতেই বাংলাদেশের একটি আশ্রমে আশ্রয় পাওয়া ওই মানসিক ভারসাম্যহীন
ভারতীয়ের বাড়ির খোঁজ পাওয়া যায়। প্রায় দেড় বছর আগে উত্তরপ্রদেশের গ্রামের বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন ওই যুবক। অ্যামেচার ভিডিও সোসাইটি বাংলাদেশ-এর সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুল জানান, গত বছরের জুনে নীলমাফারি জেলার ডিমলায় এক রিকশা চালক ওই মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে উদ্ধার করে ডিমলা থানায় পৌঁছে দেন। ওই যুবকের কোমরের হাড় ভাঙা ছিল। তাই তাকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সুস্থ হয়ে ওঠার পরে তার স্থান হয় রংপুরের একটি আশ্রমে। গত বছর ওই আশ্রমে তাকে দেখেন শামসুল। তিনি বলেন, ‘‘হিন্দিভাষী ওই ব্যক্তির কথা থেকে রামনগর কান্ডা কথাটি বুঝতে পারি। তিনি ভারতের বাসিন্দা বুঝতে পারলেও ভারতের কোথায় তাঁর বাড়ি, তা বুঝতে পারিনি।’’ কিন্তু হাল ছাড়েননি শামসুল। তিনি রামনগর কান্ডা শব্দটি দিয়ে গুগল ম্যাপে সার্চ করেন। সেখান থেকে জানতে পারেন, রামনগর কান্ডা উত্তরপ্রদেশের বাহরাইচ জেলায় অবস্থিত। কিন্তু রামনগর কান্ডার কোথায় ওই
ব্যক্তির বাড়ি, তা জানার জন্য শামসুল খোঁজ করে ফোন করেন লখনউ রেডিয়ো কাবের সেক্রেটারি দীনেশচন্দ্র শর্মাকে। শামসুল জানতে পারেন ওই ব্যক্তির বাড়ি রামনগর কান্ডার নিধি পুরওয়া গ্রামে। দীনেশ বলেন, ‘‘আমি খোঁজখবর করে শামসুলকে নিধি পুরওয়া গ্রামের প্রধানের নম্বর দিই।’’ সেই প্রধানকে ফোন করে ওই ব্যক্তির পরিবারের খোঁজ পান শামসুল। ভিডিও কলের মাধ্যমে ওই মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর বাবা-মা-বোনের কথাও বলিয়ে দেন তিনি। প্রায় দেড় বছর পরে বাংলাদেশে বাড়ির ছেলেকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তার আপনজনেরা। এরপর বিষয়টিকে অবহিত করা হয় বাংলাদেশের ভারতীয় দূতাবাসকে। একাত্তর টেলিভিশনের সহযোগিতায় প্রায় ছয় মাস পর অবশেষে তাকে মঙ্গলবার বেনাপোল বন্দর দিয়ে স্বজনদের হাতে তুলে দেয়া হলো। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, দু’দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও দূতাবাসের কর্মকর্তার ও বেনাপোল ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বজলুর রহমান। মানসিক ভারসাম্যহীন ওই ব্যক্তিকে ফিরে পেয়ে আবেগাপস্নুত হয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন স্বজনেরা।
Leave a Reply