শ্রীপুর উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসের সহকারী অফিসার সুধীর চন্দ্র সরকার ও তাঁর আওতায় ১৪ জন সার্ভেয়ারদের বিরুদ্ধে মোটা অঙ্কের উৎকোচ নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই সেটেলমেন্ট অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীরা স্থানীয় দালালদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে খুলে বসেছেন ঘুষ লেন-দেনের আড্ডাখানা।
সূত্রে জানায়, শ্রীপুর উপজেলার বিভিন্ন সিটে ১৪ জন সার্ভেয়ার ভূমি রেকর্ড সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে সুধীর চন্দ্র সরকারের আওতায় তাঁরা কাজ করেন। সুধীর বাবুর ব্যক্তিগত সেক্রেটারী আলমের মাধ্যমে উত্তোলন করা হয় সাপ্তাহে ৪০ হাজার টাকা। ১৪ জন সার্ভেয়ারের কাছ থেকে এই টাকা নেয়া হয়। তবে ১৪ জন সার্ভেয়ারের কাছ থেকে ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা যায় কার পকেটে প্রশ্ন কিন্তু রয়েই গেল।
বাপ-দাদার আমলের ত্রুটিমুক্ত জমি-জমার দলিল, খাজনা-খারিজ দিয়েও মিলে না ভূমি রেকর্ড। ভূমি রেকর্ড করতে গেলে জমিতে নানা ত্রুটি দেখানো হয়। এ সুবাদে লাখ লাখ টাকা ঘুষ দাবী করে বসেন সেটেলমেন্ট অফিস। জমির কাগজপত্র ঠিকঠাক, ত্রুটি মুক্ত।
অথচ ঘুষ না দিলে মিলছে না ভূমি রেকর্ড। আর ঘুষের অঙ্কটাও অনেক বেশি। যা অনেকের পক্ষে এতো টাকা যোগার করাও সম্ভব না। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছেন অনেকেই। আবার অনেক প্রভাবশালীরা সহজেই ভূমি রেকর্ড করে নিচ্ছেন। তাঁদের সম্পত্তিতে ত্রুটি বা কাজগপত্র ঠিকঠাক না থাকলেও সমস্যা নেই। তাঁরা সহজেই মোটা অঙ্কের উৎকোচ দিয়ে রেকর্ড সংসধন করে নিচ্ছেন।
জানা গেছে, মাত্র ৪ শতাংশ জমিতেও ২০-৩০ হাজার টাকা উৎকোচ দিতে হয়। জমির পরিমাণ বেশি হলেতো লাখের নিচে কোনো কথাই চলে না।
তাই শ্রীপুর উপজেলা সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার (এসও) সুধীর চন্দ্র সরকার এবং সার্ভেয়াররা মিলে গড়ে তুলেছেন এ সিন্ডিকেট। দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা চালিয়ে আসছেন এসব কাজকর্ম। তাঁদের হয়ে অফিসের বাইরে রয়েছে শক্তিশালী দালালচক্র।
সুধীর চন্দ্র সরকার ও তাঁর সার্ভেয়ারদের অভিযোগের শেষ নেই। ওই সেটেলমেন্ট অফিসে ভূমি রেকর্ড সংক্রান্ত সেবা নিতে গেলে গুণতে হয় বড় বড় অঙ্ক। ঘুষ ছাড়া মিলে না জমির পর্চা এমন কি মৌজার নকশাও। জমির খারিজ-খাজনা, দলিল ও যাবতীয় কাগজপ্রত্র ঠিকঠাক থাকার পরেও নানা অজুহাত দেখিয়ে ঘুষ দাবী করেন তাঁরা। সুধীর চন্দ্র সরকারের রয়েছে ব্যক্তিগত পিএস আলম। তিনি ওই পিএস এর মাধ্যমেই হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা।
ঘুষ দিতে না পারায় ভূমি রেকর্ড পায়নি বেশ কয়েক জন ভুক্তভোগী ভূমি মালিক ঢাকা সেটেলমেন্ট হেড অফিসে কর্তৃপক্ষ (ডিজি) বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগকারীরা হলেন, গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলাধীন ৪৩নং শ্রীপুর মৌজার বৈরাগীর চালা গ্রামের বাসিন্দা মোঃ আতাউর রহমান, মোঃ তোতা মিয়া, মোয়াজ্জেম হোসেন, মোঃ আইয়ুব ও মোঃ গিয়াসউদ্দিন।
তাঁরা জানায়, শ্রীপুর মৌজায় ভূমি রেকর্ড পায়নি। রেকর্ড করতে গেলে নানান টালবাহানা করে রেকর্ড এর লোকজন। যে হারে ঘুষ দাবী করে বসেন তা তাঁদের পক্ষে দেয়া সম্ভব না। পরে ভুক্তভোগী আতাউর গংয়েরা শ্রীপুর উপজেল সেটেলমেন্ট অফিসে ঢুকে উপজেলা সহাকারী সেটেলমেন্ট অফিসার (এসও) সুধীর চন্দ্র সরকার ও আব্দুল মালেকের সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় ভূমি রেকর্ড না পাওয়ার কথা জানান তাঁরা। তখন তাঁরা টাকা ছাড়া কোনো রেকর্ড হবে না জানায়। এরপর তাঁরা অফিস থেকে বের হন। এ সময় তাঁদের পিছনে পিছনে আসেন অফিসের ড্রাফটম্যান কামাল ও (এসও) সুধীর চন্দ্র সরকারের ব্যক্তিগত সেক্রেটারী আলম। পরে তাঁরা বলেন, যত জায়গায়ই যান কেনো লাভ হবে না। কাজ করতে হলে আমাদের কাছে আসতেই হবে এবং আমরা যা বলবো তাই হবে।
ভুক্তভোগী আতাউর রহমান বলেন, কত টাকা দিলে রেকর্ড হবে। সুধীর বাবুর (পিএস) আলম ও ড্রাফম্যান কামাল বলেন, পাক্কাপাক্কি (৫) পাঁচ লক্ষ টাকা লাগবে।
বেচারিরা কোনো কুলকিনারা না পেয়ে সেখান থেকে চলে আসেন। পরে স্থানীয় সংসদ সদস্য (এমপি) সবুজকে বিষয়টি জানানো হলে, তিনি সেটেলমেন্ট কর্তৃপক্ষ (ডিজি), এমনকি প্রধানমন্ত্রী বরাবরা একটি অভিযোগ করতে বলেন।
এ ব্যাপারে শ্রীপুর উপজেলা সেটেলেমেন্ট সহকারী অফিসার সুধীর চন্দ্র সরকারের সঙ্গে তাঁর ফোনে যোগাযোগ করা হলে, তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি কিছুই জানি না, যা পারেন তা করেন।
এদিকে গাজীপুরের কোনাবাড়ির বাঘিয়া মৌজায়ও চলছে ঘুষের কারবারি। এখানেকার কর্মকর্তা ও সার্ভেয়ারদের বিরুদ্ধেও লাখ লঅখ টাকা ঘুষ দাবী করার অভিযোগ উঠেছে। বাঘিয়া মৌজায় ভূমি রেকর্ড এর কাজ চলছে। এই মৌজায়ও রেকর্ড করতে গেলে চালানো হচ্ছে, স্টীম রুলার। লেনদেন হচ্ছে, ঘুষের লাখ লাখ টাকা। এ যেন আলাদ্দিনের চেরাগ।
এ ব্যাপারে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ আব্দুল বারিক বললেন, আমার কাছে কেউ কমপ্লেন করলে যথাযথ ব্যবস্থা নেবো।
Leave a Reply