বেনাপোল প্রতিনিধিঃ
যশোর জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক বেনাপোল পৌর সভার সাবেক মেয়র আশরাফুল আলম লিটন বলেছেন পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের বিভীষিকার ২৯ বছর পর ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ছিলো নৃশংস হত্যাযজ্ঞের ভয়াল দিন। মৃত্যু-ধ্বংস-রক্তস্রোতের নারকীয় গ্রেনেড হামলার ১৯ তম বার্ষিকী। সেই কথা মনে পড়লেই শরীর-মনজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। চোখের সামনে ভেসে উঠে রক্ত, বাঁচার জন্য আর্তচিৎকার ও বীভৎস লাশের ছবি। শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সহ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট ১৬ জনকে যারা নৃশংশভাবে যারা হত্যা করেছে তারাই ২০০৪ সালে ২১ আগষ্টকে সামনে রেখে তারাই ধারাবাহিক ভাবে সময়ের বিবর্তনে প্রধান মন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। কথাগুলো বললেন শার্শা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চের আয়োজনে ২১ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার উপর ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে সাবেক বেনাপোল পৌর মেয়র আশরাফুল আলম লিটন।
সোমবার বেলা ৫ টার সময় শার্শা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চ আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শার্শা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চের সভাপতি সাইফ সরকার জেসান।
প্রধান অতিথি আশরাফুল আলম লিটন বলেন, একটি ভুখন্ডের মানুষের মুক্তি নির্যাতিত নিপিড়িত মানুষের পাশে দাড়ানো ভুমির স্বাধীনতা, জাতির উন্নতি সবকিছু নিয়েই গঠিত হয় রাজনৈতিক সংগঠন। সেই সংগঠন করেছিলেন জাতির জনক শেখ মুজিব \ লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস ঐতিহ্যের ধারক বাহক এই সংগঠনটি ধীরে ধীরে হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল মুক্ত করেছিল। লড়াই সংগ্রাম ঐতিহ্য সংগ্রামের মধ্যে এবং ত্যাগের মধ্যে দিয়ে বাঙালী জাতিকে একটি স্বাধীন সার্বোভৌম রাষ্ট্র উপহার দিয়েছিল জাতির জনক। জাতির জনক বাঙালীকে মুক্ত করার জন্য তার ঐতিহাসিক ভাষনে সাড়ে ৯ কোটি বাঙালী সেদিন ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। সেদিন বাংলার হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান মুসলমান কাধে কাধ মিলিয়ে সেদিন যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে। অবশেষে ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে ২ লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রম হানির মধ্যে দিয়ে বাঙালী জাতি পেল একটি লাল সবুজের পতাকা।
তিনি আরো বলেন যারা রক্ত দিয়ে এই পবিত্র ভুমি উপহার দিয়েছে আর সেই ভুমি নষ্ট করেছে স্বাধীনতা বিরোধী জামাত বিএনপির সন্ত্রাসী এবং পাকিস্তানি ভাবধারা মানুষেরা। তারা জাতির জনককে ১৫ আগষ্ট হত্যা করে বিশ্বের কাছে কলংক লেপন করলেন। জাতির জনকের বিচার যাতে না হয় তার জন্য জিয়াউর রহমান ৫ম সংশোধনীর মাধ্যেমে জাতিয় সংসদে সংশোধন করে জাতির জনক সহ ১৫ আগস্ট নিহতদের বিচার হবে না। আমার মাথা নত হয়ে যায় আমি লজ্জিত আমার ধর্ষিত মা কেদে উঠে যে বাবা জাতির জনকের আহবানে যুদ্ধে গিয়েছিল যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে সেই বাবারা কেঁদে উঠে জাতির জনকের হত্যার বিচার হবে না।আমার মুক্তিযোদ্ধা বাবারা ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ভ্যান চালিয়ে, রিক্সা চালিয়ে জুতায় কালি করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করেছে। সেই মুক্তিযোদ্ধা বাবাদের জাতির জনকের কন্যা মুক্তিযোদ্ধা ভাতা দিয়ে সন্মানিত করেছেন। এরপর বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সরকার এর উন্নয়ন দেখে এই জামাত বিএনপির সন্ত্রাসীরা জাতির জনকের কন্যাকে ২৪ বার হত্যার প্রচেষ্টা চালায়। আমার বাঙালী জাতি কত নির্লজ্জ কত নিষ্ঠুর যে জাতির জন্য যার পিতা লড়াই সংগ্রাম করে ৪৬৮২ দিন জেল খেটেছে তাকে তো হত্যা করল আবার তার কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকেও হত্যার অপচেস্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমি ধিক্কার জানাই ওই সব নরপশুদের।
সাবেক মেযর লিটন আরো বলেন,বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিবিরোধী’ সমাবেশে অকল্পনীয় এক নারকীয় গ্রেনেড হামলার ঘটনা বাংলাদেশে এক কলঙ্কময় অধ্যায়ের জন্ম দেয়। ওই দিন সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে করা হয় একের পর এক গ্রেনেড হামলা। নেতাকর্মীদের মানববর্মে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান সে সময়ের বিরোধী দলীয় নেতা, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
২০০৪ সালের সেই সমাবেশে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার বক্তৃতা শুরু হয় বিকাল ৫টা ২ মিনিটে। তার দুই পাশে ছিলেন মোহাম্মদ হানিফ, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াসহ আওয়ামী লীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। ৫টা ২২ মিনিটে বক্তব্য শেষ করে শেখ হাসিনা ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে মাইক থেকে সরে যাওয়ার মুহূর্তেই প্রথম গ্রেনেডটি ছোড়া হয়। ট্রাকের বাঁ পাশে পড়ে গ্রেনেডটি বিস্ফোরিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ট্রাকে থাকা জ্যেষ্ঠ নেতা এবং নিরাপত্তাকর্মীরা শেখ হাসিনাকে ট্রাকের ওপর বসিয়ে দেন। এর পরপরই আরও তিনটি গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয়; চারদিকে ধোঁয়ায় আছন্ন হয়ে যায়। নেতাকর্মী ও নিরাপত্তাকর্মীরা সেখানে শেখ হাসিনাকে ঘিরে তৈরি করেন মানববর্ম।
ওই হামলা আর বিস্ফোরণের পর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে আহতদের হাসপাতালে পাঠাতে গিয়ে বিপাকে পড়েন নেতা-কর্মীরা। ওই অবস্থায় রিকশা, বেবিট্যাক্সি, এমনকি রিকশাভ্যানে করেও আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করেন তারা। সেদিনের হামলায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন ১৬ জন। আইভি রহমান ৫৮ ঘণ্টা মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ২৪ অগাস্ট মারা যান। প্রায় দেড় বছর পর মৃত্যু হয় ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের। পরে সব মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৪ জনে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা যেন বাঁচতে না পারেন, তার সব চেষ্টাই সেদিন করেছিল হামলাকারীরা।
এরপর আসল ঘটনা ধামাচাপা দিতে শুরু হয় নানা নাটক। তদন্তের গতি ভিন্ন খাতে নিতে শৈবাল সাহা পার্থ নামের এক তরুণকে আটক করে ফাঁসানোর চেষ্টা চলে। মঞ্চস্থ হয় জজ মিয়া নাটক। ২০০৫ সালের ৯ জুন নোয়াখালীর সেনবাগে জজ মিয়াকে আটক করার পর জোর করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায় করা হয়। এটি সাজানো নাটক প্রমাণ হওয়ার পর থামিয়ে দেয়া হয় তদন্ত কাজ। ১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর মতা নয়, দেশের মানুষের অধিকার, যুদ্ধাপরাধ ও বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার নিয়ে সোচ্চার ছিলেন শেখ হাসিনা। ১৯৯৬ সালে মতায় এসে তিনি সুশাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার ও যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু করেন। মতায় থাকাকালে তিনি এসব বিচারের রায় কার্যকর করেন। এসব কঠিন কাজ সম্পন্ন করতে তিনি শত্রæপরে কমপে ২৪ বার হত্যার চেষ্টার সম্মুখীন হন।
১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। ওই সময়ে জার্মানিতে থাকার কারণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরসূরি দুই কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। দীর্ঘদিন নির্বাসিত জীবন কাটান তারা। ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত করা হয়। দেশে ফিরে এসে দলকে গোছাতে তিনি সারা দেশে সাংগঠনিক সফর করেন। দীর্ঘ ৪ দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি দলের সভানেত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি রাষ্ট্রীয় মতায় ছিলেন বলেই রক্তচু উপো করে যুদ্ধাপরাধের বিচার সম্পন্ন হয়েছে। বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য শেখ হাসিনা অপরিহার্য। আওয়ামী লীগের শাসন আমলে দেশে যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে, তা নজিরবিহীন। শেখ হাসিনার হাত ধরেই বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে এক বিস্ময় বিশ্ববাসীর কাছে। বর্তমানে বিদেশিরাও বাংলাদেশের সাফল্যের উচ্ছ¡সিত প্রশংসা করেন। দেশে ও দেশের বাইরে ভিশনারি লিডার হিসেবে শেখ হাসিনার যে ঈর্ষণীয় সাফল্য তা এক কথায় অনন্য ও অসাধারণ।
এসময় প্রধান বক্তা হিসাবে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চ কেন্দ্রিয় কমিটির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল,বিশেষ অতিতি উপস্থিত ছিলেন যশোর জেলা আওয়ামীলীগের উপদেষ্ঠা মন্ডলীর সদস্য আহসান উল্লাহ মাষ্টার, মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চ এর কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারন সম্পাদক মোঃ আল মামুন, দপ্তর সম্পাদক মুহাম্মাদ নুর আলম সরদার, যশোর মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চের সভাপতি মিনহাজ রহমান প্রত্যায়, সাধারন সম্পাদক জয়নাল আবেদিন মুক্তার শার্শা উপজেলা আওয়ামীলীগের, যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ফজলুল হক বকুল, দপ্তর সম্পাদক আজিবর রহমান, প্রচার সম্পাদক ইলিয়াছ আজম, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক শেখ কোরবান আলী, বনও পরিবশে বিষয়ক সম্পাদক শেখ সারোয়ার, সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান উলাশী ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম, বেনাপোল পৌর সভার সাবেক প্যানেল মেয়র সাহাবুদ্দিন মন্টু প্রমুখ।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন যশোর জেলা আওয়ামী সাংস্কৃতিক ফোরামের কার্যকরি সদস্য জাকির হোসেন আলম।
Leave a Reply