1. [email protected] : Dhaka Mail 24 : Dhaka Mail 24
  2. [email protected] : unikbd :
বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৩:৫৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
গাজীপুর সিটির নতুন পরিষদের সভায় কিরণের দুর্নীতির তদন্তের সিদ্ধান্ত গাজীপুরের সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দুর্নীতি, অনুমোদন ছাড়াই হাজার কোটি টাকার সহ্রাধিক প্রকল্প বেনাপোলে পৃথক অভিযানে ২০৯ বোতল ফেনসিডিল সহ আটক-১ বেনাপোলে সব গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি থাকা সত্বেও বোমা মজুদ থেমে নেই বেনাপোল স্থল বন্দর এলাকা থেকে একদিনের ব্যবধানে আবারো ২৩ বোমা উদ্ধার বেনাপোলে বোমা মজুদ রাখার অভিযোগে শ্রমিক সর্দার বাদল আটক আযুর্বেদিক প্রতিষ্ঠান আয়ুশ লিঃ এর মালিক মোস্তফা ও তার স্ত্রী কারাগারে বেনাপোল বন্দর এলাকায় মাটির নিচে থেকে উদ্ধার হলো তাজা ১৮ টি বোমা বেনাপোলে যশোর বøাড ফাউন্ডেশন এর তৃতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন বেনাপোল নোম্যান্সল্যান্ডে এপার বাংলা ওপার বাংলা সৌহার্দ সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে রাখি বন্ধন উৎসব

চলে গেলেন বঙ্গবন্ধুর সহচর আঃ কুদ্দুস এমপি

  • প্রকাশিতঃ বুধবার, ৩০ আগস্ট, ২০২৩
  • ৭২ বার পঠিত

এম রানা: নাটোর-৪ (বড়াইগ্রাম-গুরুদাসপুর) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং বঙ্গবন্ধুর সহচর বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কুদ্দুস (৭৭) ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুতে গোটা নাটোর জেলায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান তার মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, জাতীয় সংসদ ভবনে প্রথম জানাজা শেষে তাকে নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে নিয়ে আসা হবে।

সেখানে জানাজা শেষে তার মরদেহ গুরুদাসপুরের নিজ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে। তৃতীয়বার জানাজা শেষে সেখানেই তাকে দাফন করা হবে। বর্ষীয়ান এই নেতা মৃত্যুকালে স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

১৯৪৬ সালের ৩১ অক্টোবর গুরুদাসপুর উপজেলার বিলসা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আব্দুল কুদ্দুস।
তার বাবার নাম মৃত্যু হায়েত উল্লাহ। বাল্যকালে গ্রামের পাঠ্যশালা শেষ শিক্ষাজীবন তিনি রাজশাহী কলেজ ও রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেন। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা আন্দোলনে যোগদানের মধ্য দিয়ে ছাত্রলীগের সক্রিয় সদস্য হয়ে ওঠেন।

১৯৬৮ থেকে ১৯৭২ পর্যন্ত তিনি বৃহত্তর রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। ১৯৬৯ সালে গণ-অভ্যুথানের সময় আঃ কুদ্দুস রাজশাহীতে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি সংগঠক হিসেবে সক্রিয় ভুমিকা রাখেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ পর্যন্ত রাজশাহী কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। ১৯৮২ থেকে ১৯৮৬ পর্যন্ত তিনি রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। পরে ১৯৮৬ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত তিনি রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব করেছেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন।

১৯৯১ সালে নাটোর-৪ আসনের প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি মোট সাতবার নৌকার মনোনয়ন পান এবং পাঁচবার নির্বাচিত হন বর্ষীয়ান এই নেতা। ১৯৯৮ সালে কুদ্দুস মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতি মন্ত্রী ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু মেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন কুদ্দুস।
অন্যায়ের সঙ্গে কখনোই আপোষ করতেন না। গেল-৩৮ বছর গুরুদাসপুর পৌর এলাকায় ভাড়া বাড়িতে বসবাস করেছেন।
উত্তর জনপদের সবচেয়ে প্রবীণ এই আওয়ামী লীগ নেতা বছর দুয়েক পূর্বে গুরুদাসপুর পৌর শহরে নির্মাণ করেছে নিজের একটি দ্বিতল বাড়ি। তবে সে বাড়ি নিমার্ণ করতেও তাকে নিতে হয়েছে ব্যাংক ঋণ।
উত্তরবঙ্গের আওয়ামী লীগের রাজনীতির বীজ যারা বপণ করেছিলেন তাদের মধ্যে চলনবিলের এই কৃতি সন্তান একজন।

দীর্ঘ ৫৮ বছরের রাজনৈতিক জীবনে বহুবার তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। পদে পদে জেল, জুলুম আর অত্যাচারে শিকার হয়েছেন। কিন্তু তারপরও রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের হাল ছাড়েননি এক মুহুর্তের জন্যও।
দলবল নির্বিশেষে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষগুলো বলছেন, কোনো সমস্যায় পড়লে তারা সরাসরি কুদ্দুস এমপি’র কাছে যেতে পারতো। এমপি’র কাছে যেতে কোনো নেতার প্রয়োজন হতো না।

গ্রামগঞ্জের নেতা-কর্মীরা ঝামেলায় পড়লেও নিজেই ডেকে বিচার-শালিস করে সমাধান করে দিতেন। যাতে করে কোর্টকাচারীতে গিয়ে কোনো প্রকার ভোগান্তিতে না পোহা হয়।

এভাবেই সকাল ৭টা থেকে ৯টা অতপর সারা দিন বিভিন্ন জনসভা ও দলীয় কাজ শেষে রাত ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত এক টানা চলতো তার এই কর্মজ্ঞ।

অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুসের তার নেশা-পেশা সব কিছুই রাজনীতিকে ঘিরে, এর বাহিরে তার কিছুই ছিল না। রাতদিন ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১৮ ঘন্টাই ব্যয় করতেন এলাকার গণমানুষের জন্য। নাম প্রকাশ করার শর্তে গুরুদাসপুর উপজেলার এক নেতা জানান, আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তার রয়েছে অনেক অবদান। বড় পর্যায়ের একজন নেতা হিসেবে শুধুমাত্র সংস্কারপন্থি হওয়ার কারণে তিনি মন্ত্রী হতে পারেননি।
বর্ষীয়ান এই নেতা এলাকার উন্নয়ন আর সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষগুলোকে নিয়েই বেশি চিন্তা করতেন।
১৯৯৮ সালে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়ে রাজশাহী অঞ্চলের মানুষের কথা ভেবে, সিরাজগঞ্জের রোড থেকে চলনবিলের মধ্যে দিয়ে বনপাড়া পর্যন্ত মহাসড়কটি তিনিই করে দিয়েছিলেন। এই রাস্তা হওয়ার আগে বগুড়া শহর দিয়ে ঘুরে আসতে হতো ওই অঞ্চলের মানুষগুলোকে। তাতে অনেক সময় লাগতো।

বঙ্গবন্ধু হত্যার পূর্ব পর্যন্ত তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর বিশ^স্ত কনিষ্ঠ সহচর। সে সময় তিনি ছাত্র রাজনীতিতে পুরো উত্তর বঙ্গের ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে ৫ বছর কারাগারে বন্দী জীবন কাটিয়েছিলেন এই নেতা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদ করতে গিয়ে দেশের সর্ব প্রথম পুলিশি আক্রমণের শিকার হয়ে আহত হন তিনি। এরপর আটকও করা হয় তাকে।

রাজনীতি করতে গিয়ে তিনি ১৭ মাসের সন্তান কল্লোলকে হারিয়েছেন। তৎকালীন পাকিস্তানি আর্মির নির্মমতায় শিকার হয়ে শহীদ হন কল্লোল।

ছেলেকে হত্যার পর কুদ্দুসকে খুঁজে বের করে হত্যার উদ্দেশ্যে বস্তায় ভরে পদ্মা নদীতে ফেলে দিয়েছিল পাকিস্তানী জান্তুরা। কিন্তু রাখে আল্লাহ-মারেকে অবশেষে তিনি বেঁচে যান।
গুরুদাসপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী জানান, সব হারানো এই মানুষটি বঙ্গবন্ধুর অকুতভয় একজন সৈনিক ছিলেন। তিনি বলেন, আমাদের কুদ্দুস ভাইয়ের জায়গাটা পূরণ হওয়ার মত কেউ নেই।
বঙ্গবন্ধুর একজন সৈনিক হিসেবে চার দিকে জামাত-বিএনপি, এমনকি নিজ দলীয়সহ হাজারো শত্রু থাকার পরেও অস্ত্রধারী ক্যাডার বা সন্ত্রাসী লালন-পালন করেননি কখনো। গুরুদাসপুর ও বড়াইগ্রাম এই দুই উপজেলার মানুষই ছিল তার শক্তি। ঘুড়ে বেড়াতেন গ্রামে-গঞ্জে, আর পাড়া-মহল্লায়। সঙ্গে
নিতেন না দেহরক্ষী। পুলিশ বাহিনীকে নিজের স্¦ার্থে কখনোই ব্যবহার করেননি তিনি। এমনকি প্রতিমন্ত্রী থাকা অবসস্থায়ও প্রটোকল নিতে চাইতেন না। ভাই, ভাতিজা ছেলে, মেয়ে এমনকি আত্বীয় স্¦জনদেরও অন্যায় করতে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেননি কখনো।

তার ৫৮ বছরের রাজনীতিতে ঘুষ, দুর্নীতি, মদ, জুয়া, বাল্যবিয়ে, ইভটিজিং, ট্যান্ডারবাজি ইত্যাতির বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার বর্ষীয়ান এই নেতা।

স্বল্প সময়ের জন্যে একবার মৎস্য ও প্রাণিস¤পদ প্রতিমন্ত্রী হয়েও কৃতিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন কওে গেছেন।
তার হাতে গড়া অনেকে জুনিয়র নেতারা দেশে বিদেশে নামে বেনামে অঢেল সম্পদের পাহাড় গড়লেও যার ছিটোফোটায় ৬ বার এমপি, এক বার মন্ত্রী হয়েও করেননি কিছুই।
রাজনীতির শেষ প্রান্তে জীবন যুদ্ধের সায়ান্নে এসে অনেক ধার দেনা, ব্যাংক লোন নিয়ে অনেক কষ্টে একটি দ্বিতল ভবন করেছেন ছেলে-মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে।

তবে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ায় অবদান রাখতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করেন তার মেয়ে কুহেলী মুক্তি। এগুলোই ছিল তার বাবার রাজনৈতিক বড় অর্জন। তিনি বলেন, বাবা অসুস্থ হওয়ার আগে বেঁচে থাকতে এমনটাই গর্বিত বোধ করতেন।

সংসদ সদস্য আব্দুল কুদ্দুস এর কন্যা যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী। কুহেলী কুদ্দুস মুক্তি আরো বলেন, গণতন্ত্র, রাজনীতি এবং আন্দোলন এই শব্দগুলোর সঙ্গে জন্মের পর থেকেই আমার পরিচয়। আমার রক্তে রক্তে রাজনীতির বসবাস। রাজনীতি যেন আমার রক্তের প্রতিটি কণার সঙ্গে মিশে আছে। তিনি বলেন, বাবার রাজনীতি দেখে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অনুধাবন করেছি যে উনার পথচলার মূলমন্ত্রই হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ।
তার বাবার জন্য দোয়া চেয়ে কুহেলী বলেন, রাজনৈতিক জীবনের বাবার ভুল থাকলে বাবাকে ক্ষমা করে দিবেন, আল্লাহ যেন আমার বাবাকে জান্নাতবাসী করেন, আমিন।


শেয়ারঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই জাতীয় অন্যান্য সংবাদ
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২২ Dhaka Mail 24
Developed By UNIK BD