উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়
পাল্টাপাল্টি অভিযোগে উত্তপ্ত ক্যাম্পাস
গাজীপুর প্রতিবেদক
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী কর্মকর্তাকে যৌন হয়রানীর অভিযোগ তুলে পিটিয়ে আহত করেছে তারই সহকর্মীরা। এ ঘটনায় ওই নারী কর্মকর্তা ও অভিযুক্ত কর্মকর্তা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে পৃথক ভাবে লিখিত অভিযোগ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ঘটনায় সোমবার পৃথক দুইটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। ঘটনা দুইটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিনত হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ওই নারীকে যৌন হয়রানীর অভিযোগ তুলে গত ২৫ জানুয়ারি দুপুরে নিজ কক্ষে ঢুকে উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মুজিবুল হক বেধড়ক মারধর করেন তারই সহকর্মী উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. নাজমুল হক ও দেওয়ান নূর ইয়ার চৌধুরী টিটু এবং সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মীর মোর্শেদ হাসান । ওই সময় ওই নারীও তাদের সাথে ছিলেন। হামলায় মুজিবুল হকের বাম হাতের বুড়ো আঙ্গুল ফেটে যায়। অন্য অফিস সহকর্মীরা দৌড়ে এসে মুজিবুল হককে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে ওই নারী তাকে হয়রানী করা হয়েছে উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও যৌন নিপিড়ন প্রতিরোধ অভিযোগ কমিটির কাছে লিখিত অভিযোগপত্র দায়ের করেন। মুজিবুল হকও উপাচার্য এবং গাছা থানায় সাধারন ডায়েরী করেন। এ ঘটনায় আলাদা দুইটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
লিখিত অভিযোগপত্রে ওই নারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেছেন, গত ১৫ জানুয়ারি তিনি প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে সনদ শাখায় যোগদান করেন। দুইদিন পর থেকে উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মুজিবুল হক (৫৯) তাকে এসএমএস দেওয়া ও যাওয়া আসার পথে গায়ে হাত দেন। বিষয়টি অন্য নারী সহকর্মীদের জানান। পরে উর্ধতন কর্মকর্তাদের জানিয়ে তিনি অন্য ফ্লোরে বদলী হন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মুজিবুল হক ও তার কয়েকজন নারী সহকর্মী তাকে বকাঝকা এবং বদলীর হুমকি দেন। এ ঘটনায় প্রতিকার চেয়ে তিনি গত ২৫ জানুয়ারী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও যৌন নিপিড়ন প্রতিরোধ অভিযোগ কমিটির কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওই নারী কর্মকর্তা বলেন, ‘এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে রাজি না। আমার যা বলার লিখিত ভাবে কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দেখবে’।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মুজিবুল হক বলেন, তিনি সব সহকর্মীকেই গুড মর্নিং লিখে ম্যাসেজ দেন। এতে দোষের কিছু তো দেখি না। আর যৌন হয়রানী হয় কিভাবে’। গায়ে হাত দেওয়া প্রসঙ্গে বলেন, ‘এটি কাল্পনিক অভিযোগ।
মুজিবুল হক আরো বলেন, ওই নারীর হয়ে মিথ্যা অভিযোগ তুলে তিন সহকর্মী তাকে নির্দয় ভাবে পিটিয়েছে। হাতের আঙ্গুল ভেঙ্গে দিয়েছে। তাই প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করে বিচার চেয়েছেন।
মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে দেওয়ান নূর ইয়ার চৌধুরী টিটু বলেন, তার যা বলার তদন্ত কমিটির কাছেই বলবেন।
এদিকে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উত্তপ্ত অবস্থা বিরাজ করছে। অধিকাংশ কর্মকর্তা উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মুজিবুল হককে অফিস কক্ষে পিটানোর ঘটনায় ক্ষুব্ধ। তাদের অভিমত যৌন হয়রানী করে থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী নির্যাতন সেলে অভিযোগ দায়ের এবং বিচারের সুযোগ রয়েছে। প্রয়োজনে থানায় অভিযোগ করতে পারেন ওই নারী কর্মকর্তা। একজন কর্মকর্তাকে এভাবে নাজেহাল করা যথাযথ হয়নি। অপরদিকে একটি পক্ষ ওই নারী কর্মকর্তার পক্ষে সোচ্চার।
পাল্টাপাল্টি অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক মাহবুবা নাসরীন বলেন, দুইটি অভিযোগই আমলে নেওয়া হয়েছে। সোমবার ভিসি অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার মহোদয় নারী কর্মকর্তার অভিযোগটি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নীপিড়ন প্রতিরোধ কল্পে গঠিত অভিযোগ কমিটির প্রধান হিসেবে তাকে এবং মুজিবুল হকের অভিযোগটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্টারকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন। তিনি প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছেন। রেজিষ্টার ছুটিতে রয়েছেন। ৩১ জানুয়ারী তিনি যোগ দিবেন। যোগ দেওয়ার পর তদন্ত শুরু করবেন। তদন্তে যিনি দোষী সাব্যস্ত হবেন, তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।