ঢাকা, শনিবার, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বনের জমি জবরদখলে সহায়তা, বিট অফিসার আসেক আলী সাময়িক বরখাস্ত

 

রোষানলে পড়ে সাময়িক বরখাস্ত নিরীহ তিন কর্মচারী
কয়েক কোটি টাকার জমি দখলে সহায়তা
অফিস থেকে গায়েব নথি
বিট কর্মকর্তার ঘুষ নেওয়ার কথোপকথন ঘুরছে সামাজিক মাধ্যমে

গাজীপুর প্রতিবেদক
বন বিভাগের জমিতে সীমানা প্রাচীর, উডলট বাগান কেটে রিসোর্টের রাস্তা ও পাকা ভবন তৈরীসহ একের পর এক জবরদখলেও জড়িত থাকার অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন ফরেষ্টর মো. আসেক আলী। তিনি ঢাকা বন বিভাগের গাজীপুরের কালিয়াকৈরের রঘুনাথপুরের বিটের বিট কর্মকর্তা। গতকাল বৃহস্পতিবার স্বাক্ষরিত এক আদেশে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী। আসেক আলীর বিরুদ্ধে জবরদখলকারীদের সাথে অর্থনৈতিক যোগসাজস করে সোনাতলা ও মধ্যচক মৌজার বনভূমি জবরদখলে সহায়তার অভিযোগ আনা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন ঢাকা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এস এম সাজ্জাদ হোসেন।

এদিকে ফরেষ্টার আসেক আলীর রোষানলে পড়ে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন ওই বিটের আরো তিন কর্মচারী। তারা হলেন বাগানমালী কাম গার্ড হাশেম আলী মাতব্বর ও সিদ্দিকুর রহমান এবং নৈশ প্রহরী কামাল হোসেন। গত রবিবার ঢাকা বিভাগীয় বন কর্মকর্তাস্বাক্ষরিত এক আদেশে তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

জানা গেছে, গত ডিসেম্বর মাসে সোনাতলা মৌজার ১৮৪ দাগের বনের জমিতে লাগানো উডলট বাগানের প্রায় সাড়ে তিন’শ গাছ কেটে ৭ ফুট প্রশস্ত আধা কিলোমিটার রাস্তা তৈরী করেন সালদহ রির্সোট নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ফরিদ মন্ডল নামে অপর এক ব্যক্তি একই দাগের জমিতে ২৯০ ফুট দীর্ঘ সীমানা প্রাচীর করেন। তাছাড়া রোকনুজ্জামান নামে এক ব্যক্তি মধ্যচক মৌজার ৩৭৪ নম্বর দাগের বনের জমিতে তিনরুম বিশিষ্ট ফাউন্ডেশন করে পাকাভবন নির্মান করতে থাকেন। প্রতিটি দখলকারীর কাছ থেকে মোটা টাকা নিয়ে কোটি টাকার বনের জমি জবরদখলে সহায়তা করেন ফরেষ্টর আসেক আলী। বিষয়টি বাগানমালী কাম গার্ড হাশেম মাতব্বর ও সিদ্দিকুর রহমান এবং নৈশ প্রহরী কামাল হোসেন মোবাইল ফোনে গত ১৮ ডিসেম্বর কালিয়াকৈর রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মনিরুল করিমকে অবহিত করেন। তিনি কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় ২৫ ডিসেম্বর সহকারী বন সংরক্ষক রেজাউল আলমকে বিয়টি মোবাইল ফোনে জানান। সহকারী বন সংরক্ষক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জবরদখলের সত্যতা পেয়ে পরে গত ২৪ জানুয়ারি অতিরিক্ত জনবল নিয়ে নির্মানাধীন অবৈধ সব স্থাপনা ভেঙ্গে দেন। ভবন ভাঙ্গার সময় পরিবার নিয়ে বাধা সৃষ্টি করেন রোকনুজ্জামানের স্ত্রী আকলিমা বেগম (৪৩)। ওই সময় আকলিমা অভিযোগ করেন ঘর করার জন্য বিট অফিসার আসেক আলী তার কাছ থেকে এক লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন। তার ঘুষ নেওয়ার কথোপকথনের অডিও সামাজিক মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে।

বাগানমালী কাম গার্ড হাশেম মাতব্বর বলেন, টাকা নিয়ে বনের জমি দখলে সহযোগীতা করেছেন বিট অফিসার আসেক আলী। তার জবর দখলের সহায়তার বিষয়টি তারাই ফোনে রেঞ্জ কর্মকর্তা ও সহকারী বন সংরক্ষককে জানিয়েছেন। তারপরও গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বিট অফিসারের সাথে তাদের তিনজনকেও তিন কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ করেন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা। বিট অফিসারের মাধ্যমে তারা ১৫ ফেব্রুয়ারি নোটিশের জবাব বিট অফিসারের মাধ্যমে দাখিল করেন। রঘুনাথপুর বিট অফিসের পিওন বুকেও জবাব জমা দেওয়ার তারিখ লিপিবদ্ধ আছে। বিট অফিস থেকে কালিয়াকৈর রেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয়ে তিন কর্মচারির লিখিত জবাব পৌছানোর পর রেঞ্জ অফিস থেকে জবাবগুলো বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু ওই জবাব গায়েব হয়ে যায় ঢাকা বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে। নোটিশের জবার না পেয়ে গত ৩ মার্চ ওই তিন কর্মচারিকে সাময়িক বরখাস্ত করেন ঢাকা বিভাগীয় কর্মকর্তা।

রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মনিরুল করিম জানান, ফরেস্টার আসেক আলী সরকারি দায়িত্ব পালনে চরম অবহেলা ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে বনভূমি জবরদখলের সুযোগ করে দিয়েছেন। এর একক দায় তার। কর্মচারিদের নয়। তিনি সরেজমিন তদন্ত করে বিটের কর্মচারিদের দুর্নীতির সঙ্গে কোন সম্পৃক্ততা পাননি। কর্মচারিদের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাবে তিনি কর্মচারিদের জবাবের সাথে একাত্বতা প্রকাশ করে মতামত দিয়েছেন। আসেক আলীর দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধে এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে তিনি লিখিতভাবে জানিয়েছেন। কিন্তু নথি গায়েব হয়ে যাওয়ায় তিন কর্মচারীদের জবাব বিভাগীয় বন কর্মকর্তা পর্যন্ত পৌছাঁয় নি।

ঢাকা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এস. এম সাজ্জাদ হোসন বলেন, রঘুনাথপুর বিটের বিট অফিসার ও তিন কর্মচারিকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তিন কর্মচারী নির্দোষ হলে তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শেয়ার করুনঃ

বিজ্ঞাপন

সর্বশেষ

ফেসবুক পেজ

আর্কাইভ

SatSunMonTueWedThuFri
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       
      1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031     
     12
10111213141516
17181920212223
242526272829 
       
  12345
13141516171819
20212223242526
       
      1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031     
    123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930 
       
   1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031 
       

স্বত্ব © ২০২৩ ঢাকা মেইল ২৪