এএসআই রুহুল আমিন
গাজীপুর প্রতিনিধি
৫০ হাজার টাকা না দেয়ায় নীরিহ এক যুবককে মাদক মামলায় জড়ানোর অভিযোগ উঠেছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) কোনাবাড়ি থানা এএসআই রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মঙ্গলবার উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন যুবকের দাদা ঝুট গুদামের শ্রমিক মো. লাল মিয়া (৬২)। অভিযোগের প্রেক্ষিতে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
জিএমপির উত্তর বিভাগের উপ-কমিশনারের কাছে করা লিখিত অভিযোগে লাল মিয়া উল্লেখ করেন, তার নাতি ইমন (১৮) তার সআথে ঝুট গুদামে কাজ করেন। কাজ না থাকায় গত ৪ ফেব্রুয়ারি ইমন ও তার বন্ধু নয়ন (১৯) আমবাগ লালঘাট ব্রিজ এলাকায় ঘুরতে যায়। সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে সোর্স শরীফকে নিয়ে এসএআই রুহুল আমিন ইমনকে ও নয়নকে লালঘাট ব্রিজের কাছ থেকে আটক করেন। এক ঘন্টা পর তিনি সোর্সসহ তাদের মিতালী ক্লাব সংলগ্ন ভাড়াবাসা এসে মাদকদ্রব্যে তল্লাশীর কথা ঘরে প্রবেশ করেন। আসবাবপত্র বিছানা ও আলমারি তল্লাশি করে কোন মাদক পাননি ওই পুলিশ কর্মকর্তা। এ পর্যায়ে ওই এএসআই আলমারিতে থেকে তিন হাজার টাকা ও প্রায় দেড় ভরি স্বর্ণালংকার এবং একটি অপ্পো ব্রান্ডের পুরাতন মোবাইল সেট নিয়ে যায়। তারা ইমনকে মারধর করে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা দিলে ইমনকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলেও জানান তারা। টাকা না দিলে মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে ইমনকে নিয়ে চলে যান তারা। ওইদিন রাতে ইমনের কাছ থেকে ২৫টি এবং নয়নের কাছ থেকে ১৫টি ইয়াবা উদ্ধার দেখিয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে জেল হাজতে পাঠান ওই এএসআই। বাসায় তল্লাশী ও ইমনকে মারধরের সত্যতা বাসার সিসি ক্যামেরায় ভিডিও ফুটেজ রয়েছে।
লাল মিয়া আরো বলেন, তাদের পরিবার দরিদ্র। ইমনের বাবা নুর আলম ঝুট গুদামে ডেইলী লেবারের কাজ করেন। ইমন সুইং মেশিন চালিয়ে প্যান্ট ও গেঞ্জি তৈরীর কাজ করে। তাদের পরিবারের কেউ মাদক বিক্রি দূরে থাক সেবনও করেন না। মূলত টাকা না দেয়ার কারণে নাতিকে মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়ে জেলে প্রেরণ করা হয়েছে। নয়নের মায়ের কাছেও একই কায়দায় টাকা দাবি করে ৪০ হাজার টাকা নেয় পুলিশ কর্মকর্তা। তার পরও নয়নকে আসামী করেছে।
ইমনের বাবা নূর আল বলেন, ঘটনার দিন তিনি বরিশালে পীরের দরবারে ছিলেন। এসে শোনেন ছেলেকে মাদক মামলায় গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হয়েছে। মেয়ের জন্য অল্প অল্প টাকা জমিয়ে কিছু স্বর্ণের জিনিস কিনেছিলেন। ওই পুলিশ কর্মকর্তা সব গয়না নিয়ে গেছেন।
অভিযোগ অস্বীকার করে এএসআই রুহুল আমিন বলেন, তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে।
কোনাবাড়ি-কাশিমপুর জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, ইতিপূর্বেও সোর্স নিয়ে ১০০ গ্রাম গাঁজা দিয়ে এক নিরীহ ব্যক্তিকে মামলার ভয় দেখিয়ে এএসআই রুহুলের বিরুদ্ধে ৪০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। ওই অভিযোগের তদন্ত করে সত্যতা পাওয়ায় জিএমপি হেডকোয়ার্টারে তার বিরুদ্ধে রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। লাল মিয়ার অভিযোগের প্রেক্ষিতে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি করে তাকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বুধবার তদন্ত শুরু করবেন তিনি।