গাজীপুর প্রতিবেদক
‘বাবা ছিল তার সবকিছু। রাম নেই আজ তিন দিন। আজ তিন দিন ধরে আমার মেয়েটা পাপা পাপা করতে করতে কেঁেদ পাগল হয়ে যাচ্ছে। আমি ওকে কি বলে শান্তনা দিব’। ২৬ মাসের একমাত্র মেয়েকে কোলে নিয়ে এসব কথা বলার সময় বার বার কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছিলেন গত মঙ্গলবার গাজীপুর টঙ্গীতে উড়াল সেতুতে বাসচাপায় নিহত ডুয়েট শিক্ষক রামকৃষ্ণ সাহার স্ত্রী বৃষ্টি সাহা।
রামকৃষ্ণ সাহা (৪০) ছিলেন গাজীপুরের ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েটের) স্থাপত্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে ভাড়ার মোটরসাইকেলে করে বিশ^বিদ্যালয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। পথে টঙ্গীতে প্রভাতী বনশ্রী পরিবহনের বাসচাপায় মোটরসাইকেলের চালক দিদার আলমসহ নিহত হন তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি এবং সাধারন শিক্ষার্থীরা ন্যায় বিচারের দাবিতে ডুয়েট ক্যাম্পাসে মানববন্ধনের আয়োজন করেন। ওই অনুষ্ঠানে মেয়েসহ উপস্থিত হন অকাল বিধবা বৃষ্টি সাহা (৩২)। এ ঘটনায় বাসটি জব্দ হলেও তিন দিনেও গ্রেপ্তার হননি চালক।
বৃষ্টি সাহা বলেন, ‘রামকে তো আর পাবনা। এখন আমার একটাই চাওয়া, যেটা রাম চাইতেন। ও চাইতো আমাদের মেয়ে একদিন অনেক বড় মানুষ হবে। আমি রামের এ স্বপ্নটা পূরন করতে চাই। মেয়েটার বয়স মাত্র ২৬ মাস। সে কিছুই বুঝে না। আমার একটা চাকুরি খুব প্রয়োজন। মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটা চাকুরি দিলে আামরা মা-মেয়ে বেঁচে যাই। এ মুহুর্তে এটাই আমার চাওয়া’।
ডুয়েট শিক্ষক নিহতের ঘটনায় মানববন্ধন
ওইদিন ঘটনা প্রসঙ্গে বৃষ্টি সাহা বলেন, প্রতিদিন বাসে যাতায়ত করে। ভোর ৬টায় ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে বের হয়। কিন্তু ওইদিন অনেক ডাকা ডাকির পরও নির্ধারিত সময়ে উঠেনি। পরে ৯টায় উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা খেয়ে বের হয়। দুই ঘন্টার জানতে পারি সে আর নেই। আমি ঘাতক বাস চালকের ফাঁসি চাই’।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে মানববন্ধনে যোগ দিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং বিচার দাবি করেন। ড়–য়েটের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলামের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার হিমাংসু ভৌমিক, ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান।
বক্তারা বলেন, রামকৃষ্ণ সাহার মত একজন মেধাবী শিক্ষকের অকাল প্রয়াণ বিশ্ববিদ্যালয় তথা দেশের জন্য একটি অপূরণীয় ক্ষতি। এই ক্ষতি পূরণ কখনো সম্ভব নয়। ভবিষ্যতে এ ধরনের ক্ষতির ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে তার জন্য ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের জন্য প্রয়োজন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।